বর্তমান সময়ে Ecommerce হলো সবথেকে জনপ্রিয় ব্যবসা গুলোর মধ্যে একটি। কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবীর সবকিছু এখন অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে।
খাবার দ্রব্য থেকে শুরু করে, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র, বই, আসবাবপত্র, বাড়ি-গাড়ি, সবকিছু বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।
শুধু তাই নয় ই-কমার্সের Global Ecommerce Sales Growth – এর দিকে যদি দেখেন তাহলে সেটা ক্রমাগত উর্ধমূখী। আর আগামী পৃথিবীর মার্কেট ধীরে ধীরে পুরোটাই অনলাইন হয়ে পড়বে। এটা একটু রিসার্চ করলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
তাই আপনি যদি চান এমন একটা ব্যবসা শুরু করতে যার ভবিষ্যৎ ভালো, শুধু যে ভালো তাই ই নয় পরবর্তী Generation যার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে, তাহলে Ecommerce ব্যবসা আপনার জন্য একদম Perfect।
এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে শুরু করব ইকমার্স Business?
আজকের এই প্রতিবেদনে আমি E-Commerce কত রকমের হয় এবং কিভাবে কত টাকা খরচ করে সাইট বানিয়ে কোন ধরনের প্রোডাক্ট সেল করবেন, কিভাবে লাভ করবেন, এসব কিছু আমি এই প্রতিবেদনে বলার চেষ্টা করব। তাই প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লেই ইকমার্স সম্পর্কে সবকিছু খুব সহজেই বুঝে যাবেন।
E-Commerce এর সুযোগ ও সম্ভাবনা
১. ই–কমার্স কত রকমের হয়
আমরা সকলেই জানি যে ই-কমার্স মানে হলো অনলাইনে সেলিং এর ব্যবসা। আর এই অনলাইনে সেলিং এর ব্যবসা ৩ ধরনের হয়ে থাকে।
(ক) নিজেই ম্যানুফ্যাকচারার
(খ) হোলসেল কিনে রিসেলিং
(গ) সেলার যোগ করে সেলিং
এগুলোর সামান্য বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলো।
আশা করবো কিছু আইডিয়া পাবেন নিচের তথ্যগুলো থেকে।
(ক) নিজেই ম্যানুফ্যাকচারার
আপনার নিজের যদি একটা কম্পানি থাকে এবং আপনি আপনার কম্পানিতে তৈরি হওয়ার প্রোডাক্ট কাস্টমারদের সরাসরি সেল করবেন। তার জন্য আপনার একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
এরকম অনেক ওয়েব সাইট আছে আমাদের দেশে, যারা নিজেদের কম্পানির প্রোডাক্ট ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে সেল করে দেয়।
(খ) হোলসেল কিনে রিসেলিং
আপনার কোনো প্রোডাক্টশন কম্পানি নেই, আপনি অন্য কম্পানির প্রডাক্ট Wholesale রেটে কিনে অনলাইনে বিক্রি করবেন। এটি হলো সবথেকে জনপ্রিয় ই-কমার্স ব্যবসা।
এটা খুব সহজে শুরু করা যায়। যারা নতুন ই-কমার্স শুরু করতে চান তাহলে জন্য এটি Best বলে আমি মনে করি। এই ব্যবসাটা আপনি দুই রকম ভাবে করতে পারবেন। (ক) গুদামজাত করে এবং (খ) অর্ডার এর পর কিনে।
(গ) সেলার যোগ করে সেলিং
এখানে আপনি নিজে একটা ই-কমার্স সাইট তৈরি করবেন।
মাঝখান থেকে আপনি কমিশন পাবেন। যেমনটা অ্যামাজন, ক্লিপক্ল্যাপস ইত্যাদি কম্পানি করে থাকে। এদের নিজেদের কোনো প্রডাক্ট নেই। সেলাররা বিজ্ঞাপন দেয় প্রোডাক্টের, সেই প্রোডাক্ট কাস্টমাররা দেখে কিনে, শুধু মাঝখান থেকে কমিশন লাভ করে এই সমস্ত ই-কমার্স সাইট গুলো।
আশা করি ই-কমার্স কত ধরনের হয় সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। এখন কথা বলব দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে।
২. কিভাবে ই–কমার্স সাইট তৈরি করব
এই ধরনের সাইট দুই ভাবে তৈরি করতে পারবেন। নিচে এই দুটি মাধ্যম দেওয়া হলোঃ- (ক) নিজেই ওয়েব সাইট তৈরি করবেন
(খ) ই-কমার্স তৈরির কম্পানীর মাধ্যমে
নিচে আমি এই দুইটা বিষয় সম্পর্কে সামান্য বিস্তারিত তথ্য বোঝার জন্য নিয়ে দিচ্ছি। আশা করবো আপনাদরে উপকারে আসবে তথ্যগুলো।
(ক) নিজেই ওয়েব সাইট তৈরি করবেন
নিজেই ওয়েব সাইট তৈরি করতে হলে আপনার টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে। একটা ডোমেইন কিনতে হবে, একটা হোস্টিং কিনতে হবে এবং আপনি কি ধরনের ই-কমার্স সাইট তৈরি করতে চান তেমন থিম ব্যবহার করতে হবে, আর সর্বশেষে ভালোভাবে কাস্টমাইজ করতে হবে।
(খ) ই-কমার্স তৈরির কম্পানীর মাধ্যমে
আর যদি এই ধরনের জ্ঞান না থাকে তাহলে ই-কমার্স কম্পানির সাহায্য নিতে পারেন। এই ধরনের সাইট গুলো কিনতে বিভিন্ন দামের প্রয়োজন হয়। এটা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের সাইট তৈরি করবেন সেটার উপর। ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার পর্যন্ত ই-কমার্স সাইট ক্রয় করতে পারবেন। এভাবে আপনি ই-কমার্স কম্পানির সাহায্য নিয়ে একটা সাইট তৈরি করতে পারবেন।
৩. কি প্রোডাক্ট সেল করবেন
কি প্রোডাক্ট সেল করবেন
সাইট তৈরি হয়ে যাওয়ার পর প্রশ্ন হলো কি ধরনের প্রোডাক্ট সেল করবো ? বিভিন্ন ধরনের পণ্য সেল করতে পারেন। তবে সবসময় জনপ্রিয় বা মানুষের দৈন্দিন জীবনে বেশি ব্যবহার হয় এমন পণ্য সেল করাই উত্তম বা যেই পণ্যটির চাহিদা বেশি। আমি যদি সাজেশন দেই তাহলে কয়েকটি প্রোডক্ট সম্পর্কে বলতে পারি।
যেমন:
(১) আবশ্যিক দ্রব্য সেল করুন
(২) মুদিখানার দ্রব্য
(৩) ওষুধ
(৪) পোশাক
(৫) বই
(৬) ক্লিনিং প্রোডাক্ট
উপরের এই ধরনের পণ্য গুলো বর্তমানে মানুষের বেশি প্রয়োজন হয় বা এই ধরনের পণ্য বেশি বিক্রি হয়। তবে এই ধরনের পণ্য সেল করার জন্য আপনার কর্মী ও অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
৪. সেল কিভাবে হবে
সাইট তৈরি হয়েছে, প্রোডাক্ট নির্বাচন হয়েছে, এখন কিভাবে সেল হবে সেই সম্পর্কে কথা বলা যাক। ব্যবসার মডেলটি আসলে খুবই সহজ, আপনার কাজ ৩টি। নিচের দেওয়া হলোঃ-
(ক) ই-কমার্স সাইট তৈরি
(খ) প্রোডাক্টের ছবি ও দাম সহ আপলোড এবং (গ) অর্ডার এলে ডেলিভারি
নিচে সামান্য বিস্তারিত দেওয়া হলো।
আসলে এগুলো যদিও উপরে পড়লে ধারণা পাবেন তারপরেও আমি বোঝার জন্য নিচের কিছু তথ্য শেয়ার করছি। (ক) ই-কমার্স সাইট তৈরি
আপনাকে একটি ই-কমার্স সাইট তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ আপনি সাইট তৈরি করবেন নিজের কম্পানী হিসেবে। আর কিভাবে সাইট তৈরি করবেন সেটা উপরে বলে দেওয়া হয়েছে।
(খ) প্রোডাক্টের ছবি ও দাম সহ আপলোড
আপনি যে ধরনের সাইট তৈরি করেছেন বা যে প্রোডাক্ট সেল করবেন সেই পণ্যটির ছবি তুলে দাম সহ সাইটে আপলোড করুন। যেমনটা আমরা amazon.in, clipclaps.com, bigbasket.com, সাইট গুলোতে দেখতে পাই।
৫. কিভাবে লাভ পাবেন
এখন আলোচনা করব কিভাবে ইনকাম করা যায় সেই সম্পর্কে। প্রেমেন্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো হলোঃ-
(ক) প্রিপেইড অর্ডার
(খ) COD অর্ডার
অনেকেই জানেন বিষয় দুইটা। তারপরেও আমি ধারণা দিচ্ছি। আসলে বর্তমানে অনলাইনে বিজনেস করার জন্য আমাদের ছোট ছোট করে অনেক কিছুই জানতে হবে।
(ক) প্রিপেইড অর্ডার
প্রিপেড অর্ডার হলো কাস্টমার প্রোডাক্ট কেনার সময়ই টাকা প্রে করে দেওয়াকে বোঝানো হয়। এছাড়াও আরো একটি মাধ্যম রয়েছে। পপুলার না হলে অবশ্যই এই অর্ডার পাওয়া যাবে না বললেই চলে। অনেক সময় অনেকেই নতুন ওয়েবসাই বা ই-কমার্স দেখে প্রিপেইড অর্ডার করতে চাইবে না।
(গ) COD অর্ডার COD অর্থাৎ Cash On Delivery অর্ডারের সুযোগ রাখতে পারেন। আপনাকে দুই রকমের সুবিধা রাখতে হবে আপনার সাইটে।
সাইট যখন তৈরি করা হয় তখন এই বিষয় এড করতে হয় বা দেওয়া থাকে। সাইট যদি আপনার নিজের থাকে তাহলে কম সময়ে টাকা হতে পেয়ে যাবেন। প্রথমে হয়তো ১০ হাজার টাকা আয় হতে পারে বা কম বেশিও হতে পারে। কিন্তু যখন সেলের সংখ্যা বাড়বে তখন ১ লক্ষ টাকাও আয় করতে পারবেন।
৬. কি কি লাইসেন্স লাগবে
সবার শেষে যেই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো লাইসেন্স। এই ধরনের বিজনেস বা ব্যবসা শুরু করতে গেলে প্রথমে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
যেমন, ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংকের একাউন্ট, GST নাম্বার, ROC রেজিস্ট্রেশন, যে প্রোডাক্ট সেল করবেন তার লাইসেন্স যদি থাকে।
এসব কিছু যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে কখনোই আইনি জটিলতায় পড়তে হবে না।
এছাড়া এখন থেকে বৈধভাবে বাংলাদেশে ই-কমার্স ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সকল কোম্পানিকে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি নম্বর নিতে হবে।
এমনকি যারা ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করবেন তাদেরও এই আইডি নম্বর লাগবে।
এর নাম দেয়া হয়েছে ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা (ডিবিআইডি) Digital Business Identification Number (DBID)
এজন্য ডিবিআইডি নামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে বলে বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।