৮ মাসের গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়া মায়ের মনে দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করতে পারে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কীভাবে এ সময় বাচ্চার নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করা যায়, কম নড়াচড়ার কারণ কী হতে পারে, এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থা জুড়ে মা আর বাচ্চার মধ্যে এক অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ চলে। এই যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো বাচ্চার নড়াচড়া। তাই আট মাসের গর্ভে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়া যেকোনো মায়েরই মনে চিন্তা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে চিন্তা নেই, এমন পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গেলে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
৮ মাসের গর্ভে বাচ্চার নড়াচড়া কম হওয়ার কারণ:
- ঘুম বা বিশ্রাম: বাচ্চা গর্ভের মধ্যেও ঘুমায়। তাই মাঝে মাঝে একটানা দীর্ঘ সময় বাচ্চার নড়াচড়া না অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক।
- গর্ভফুলের অবস্থান: বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে গর্ভফুল পেটের পেছনে চলে যায়। ফলে নড়াচড়া আগের মতো তীব্র নাও লাগতে পারে।
- মা’র অবস্থান: পিঠের দিকে শুয়ে থাকলে নড়াচড়া কম অনুভূত হতে পারে। পাশে বা বাম কাত হয়ে শোওয়া ভালো।
- খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস: খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে, যা বাচ্চার আরো নড়াচড়া করতে উৎসাহ দেয়। তাই নিয়মিত, সুষম খাবার গুরুত্বপূর্ণ।
- অন্যান্য কারণ: কিছু ক্ষেত্রে জ্বর, ইনফেকশন, কিছু ওষুধের প্রভাব, অক্সিজেনের স্বল্পতা বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণেও নড়াচড়া কমতে পারে।
৮ মাসের গর্ভে বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে করণীয়:
- নিজের অবস্থান পরিবর্তন করুন: পাশে বা বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকুন। শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিন।
- ঠান্ডা পানীয় পান করুন: ঠান্ডা পানীয় পান করলে বাচ্চা তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে, ফলে নড়াচড়া অনুভূত হবে।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার খান: চকোলেট, ফল বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে, যা বাচ্চার নড়াচড়া বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
৮ মাসের গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে করণীয়
প্রথমত, আতঙ্কিত হবেন না। ৮ মাসের গর্ভবতী অবস্থায়, বাচ্চারা কম জায়গা পেয়ে নড়াচড়া কম করে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, নড়াচড়া কম হওয়া সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
কিছু টিপস:
- নড়াচড়া গণনা করুন: প্রতিদিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে এক ঘন্টা শুয়ে থেকে বাচ্চার নড়াচড়া গণনা করুন। যদি ঘন্টায় ১০ বারের কম নড়াচড়া অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- ঠান্ডা পানীয় পান করুন: ঠান্ডা পানীয় বা মিষ্টি জিনিস খেলে বাচ্চার নড়াচড়া বেড়ে যেতে পারে।
- পেটের উপর হালকা চাপ দিন: পেটের উপর হালকা চাপ দিলে বাচ্চা নড়াচড়া করতে পারে।
- পাশে শুয়ে থাকুন: বাম পাশে শুয়ে থাকলে বাচ্চার রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় এবং নড়াচড়া বৃদ্ধি পেতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে, নড়াচড়া কম হওয়ার কারণ হতে পারে:
- গর্ভফুল সামনের দিকে থাকা
- তীব্র ব্যথানাশক বা ঘুমের ওষুধ খাওয়া
- মা অ্যালকোহলে আসক্ত বা ধূমপায়ী হলে
- গর্ভাবস্থায় জটিলতা
যদি আপনার বাচ্চার নড়াচড়া কম মনে হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
গর্ভধারণের সময়, আপনার শিশুর নড়াচড়া অনুভব করা হলো সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে একটি। প্রতি লাথি, কিল, ও গড়াগড়ি আপনাকে জানায় যে আপনার ছোট্ট সদস্যটি ঠিক আছে এবং বেড়ে চলেছে। কিন্তু যখন আপনি ৮ মাসের গর্ভে কম নড়াচড়া অনুভব করেন, তখন চিন্তা ও উদ্বেগ স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
৮ মাসের গর্ভে বাচ্চার নড়াচড়া কম হওয়ার কারণসমূহ:
- অস্থায়ী কারণ: কখনো কখনো, বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকতে পারে, আপনার অবস্থানের কারণে নড়াচড়া কম অনুভূত হতে পারে, অথবা আপনি তাকে অনুভব করার জন্য যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছেন না।
- অ্যামনিয়োটিক তরলের পরিমাণ কম: অ্যামনিয়োটিক তরল বাচ্চাকে সুরক্ষা দেয় এবং নড়াচড়া করার জন্য জায়গা দেয়। এর পরিমাণ কমে গেলে বাচ্চার নড়াচড়া কমতে পারে।
- প্লাসেন্টার সমস্যা: প্লাসেন্টা বাচ্চাকে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। এর কার্যকারিতা কমে গেলে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং কম নড়াচড়া করতে পারে।
- গর্ভাবস্থার জটিলতা: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বা সংক্রমণের মতো গর্ভাবস্থার জটিলতা বাচ্চার নড়াচড়া কমিয়ে দিতে পারে।
আপনি যখন কী করবেন:
- আপনার নড়াচড়া গণুন: দুই ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার নড়াচড়া অনুভব করা সাধারণ। কম নড়াচড়া অনুভব করলে, একপাশে শুয়ে থাকুন এবং ৩০ মিনিট পর্যন্ত নড়াচড়া গণুন।
- আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন: কম নড়াচড়া অনুভব করলে, অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। তিনি আপনার গর্ভাবস্থার ইতিহাস নেবেন, শারীরিক পরীক্ষা করবেন, এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
- নন-স্ট্রেস টেস্ট: এই পরীক্ষাটি বাচ্চার হৃৎস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করে এবং তার সুস্থতা নিরূপণ করে।
- বায়োফিজিক্যাল প্রোফাইল: এটি নন-স্ট্রেস টেস্টের সাথে শিশুর নড়াচড়া ও শ্বাস গণনা করে।
- আল্ট্রাসাউন্ড: এটি বাচ্চার অবস্থান, অ্যামনিয়োটিক তরলের পরিমাণ, এবং প্লাসেন্টার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে।
গর্ভাবস্থায়, বাচ্চার নড়াচড়া তার স্বাস্থ্য ও wellbeing-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। নিয়মিত নড়াচড়া নিশ্চিত করে যে বাচ্চা সঠিকভাবে বিকশিত হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পাচ্ছে। ৮ মাসের গর্ভকালীন সময়ে, বাচ্চা বেশ সক্রিয় থাকে এবং প্রতিদিন অনেকবার নড়াচড়া করে।
কতটুকু নড়াচড়া স্বাভাবিক?
এই পর্যায়ে, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ বার নড়াচড়া স্বাভাবিক। নড়াচড়া বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন লাথি মারা, ঘোরাঘুরি করা, ঠেলা দেওয়া, বা পেটে ফোঁটা তোলা।
নড়াচড়া কমে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ:
সাধারণ কারণ:
- ঘুম: বাচ্চা ঘুমের সময় কম নড়াচড়া করে।
- খাওয়ার পর: খাওয়ার পর বাচ্চা কিছুক্ষণের জন্য কম সক্রিয় থাকে।
- পেটে জায়গা কম: ৮ মাসের সময়, বাচ্চার পেটে জায়গা কম থাকে, তাই নড়াচড়া কিছুটা কমে যেতে পারে।
অসাধারণ কারণ:
- অমনিওটিক তরলের পরিমাণ কমে যাওয়া: অমনিওটিক তরল বাচ্চাকে নড়াচড়া করার জন্য স্থান প্রদান করে। তরলের পরিমাণ কমে গেলে নড়াচড়া কমে যেতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় জটিলতা: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বা প্রি-এক্লেম্পসিয়া-এর মতো জটিলতা নড়াচড়া কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
- জন্মগত ত্রুটি: কিছু জন্মগত ত্রুটি বাচ্চার নড়াচড়া কমিয়ে দিতে পারে।
কখন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন?
- যদি আপনি মনে করেন বাচ্চার নড়াচড়া আগের চেয়ে কমে গেছে।
- যদি 24 ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা 10 বারের কম নড়াচড়া করে।
- যদি বাচ্চার নড়াচড়ার ধরণে হঠাৎ পরিবর্তন হয়।
- যদি আপনার পেটে তীব্র ব্যথা, রক্তপাত, বা জ্বর হয়।
কীভাবে বাচ্চার নড়াচড়া বাড়ানো যায়?
- পেটে হালকা মালিশ করুন।
- ঠান্ডা পানীয় পান করুন।
- কিছুক্ষণ হাঁটুন।
- শুয়ে শুয়ে গান শুনুন।
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং নড়াচড়ার কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত জানানো মায়ের ও বাচ্চার সুস্থতার জন্য জরুরি।
কিছু টিপস:
- নিয়মিত নড়াচড়া গণনা করুন।
- নড়াচড়া কমে গেলে घबराবেন না, উপরে উল্লেখিত টিপসগুলো অনুসরণ করুন।
- কোনো ঝুঁকির লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
- মনে রাখবেন, নিয়মিত চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ এবং সঠিক তথ্য আপনাকে একটি সুস্থ ও নিরাপদ গর্ভাবস্থা সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।
গর্ভাবস্থায় নড়াচড়া কমে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে। তবে, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ের ও বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয় না। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন, এবং আপনার বাচ্চার আগমনের জন্য অপেক্ষা করুন।