শিক্ষা কি? শিক্ষা কত প্রকার কি কি?

শিক্ষা কি (What is education) বা শিক্ষা কাকে বলে আজকের আর্টিকেলে আমরা এই শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। শিক্ষা সম্পর্কে যারাই কথা বলেছেন তারা সবাই নিজের মতো করে ভেবে নিয়েছে শিক্ষাকে। বলা যায় তারা নিজেদের মতো করে সংজ্ঞা দিয়েছেন।

শিক্ষা কি? শিক্ষা কত প্রকার কি কি?

তাই যাদের হাত ধরে শিক্ষা এবং শিক্ষাব্যবস্থা আজ এই পর্যন্ত এসেছে সেই সব শিক্ষাবিদ ও মনিষীদের লেখা কিছু কথা এখানে উল্লেখ করবো।

এই সব শিক্ষাবিদ ও মনিষীদের কথা আপনি কখনো শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এড়িয়ে যেতে পারবেন না। 

মু. মিজানুর রহমান মিজান বলেন –

শিক্ষা হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যাক্তিগত বিকাশের সব থেকে শক্তিশালী মাধ্যমে। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে শিক্ষা হলো কোনো কিছু জানা বা কোনো বিশেষ বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করা।

তবে, শিক্ষাকে যখন ব্যাপক ভাবে চিহ্নিত করা হয় তখন দেখা যায় শিক্ষা হলো একটি পদ্ধতিগত ও জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভ্যস্ত শিক্ষার সংর্কীণ রূপ।

তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি শিক্ষা কি বা কাকে বলে

শিক্ষা কি? (What is education)

শিক্ষা প্রক্রিয়ার কোন ব্যাক্তির গুণাবলির পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎস দেওয়া হয় এবং সমাজে একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিতা লাভ করার জন্য যে দক্ষতা গুলোর সহায়তা  প্রয়োজন করা হয়।

সাধারন অর্থে বলতে গেলে শিক্ষা হলো জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করাকে বুঝাই। আবার ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে পদ্ধতিগত ভাবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকে শিক্ষা বলে।

ইমেইল কি

তবে, শিক্ষা হলো সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা লাভের পরে একজন মানুষের আচার-আচরণ, বাঞ্চিত ও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়।

আশাকরি আপনি সহজে বুঝতে পারছেন এডুকেশন বা শিক্ষা কি? তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি শিক্ষা কাকে বলে

শিক্ষা কাকে বলে? | shikha kake bole

শিক্ষা বলতে আমরা জ্ঞান বা দর্ক্ষাতা অর্জন করাকে বুঝে থাকি। আর শিক্ষাকে ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে পদ্ধতিগত ভাবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকে শিক্ষা বলে।

যুগে যুগে নানা মনিষীগণ শিক্ষাকে নানা ভাবে সজ্ঞায়িত করেছেন। চলুন এর মধ্যে কিছু সজ্ঞা আমরা জেনে আসি। 

(১) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – শিক্ষা হলো সেটাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশন করে না বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তুলে।

(২) শঙ্করাচার্য – আত্মজ্ঞান লাভ করাকে শিক্ষা বলে।

(৩) এরিস্টটল – সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা।

(৪) কৌটিল্য – শিক্ষা হলো শিশুকে দেশ বা জাতিকে ভালোবাসার প্রশিক্ষণ দেওয়া কৌশল।

(৫) সক্রেটিস – শিক্ষা হলো মিথ্যার অপনোদন এবং সত্যের বিকাশ।

শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি

শিক্ষা বাংলা ভাষার একটি শব্দ। যার উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত ‘শাস’ ধাতু থেকে। শাস এর অর্থ হলো নিয়ন্ত্রণ করা, শাসন করা, নির্দেশদান করা ইত্যাদি।

শিক্ষা শব্দের পাশাপাশি বা প্রতিশব্দ আমরা আর একটি শব্দ ব্যবহার করি সেটা হলো ”বিদ্যা”। এই বিদ্যা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃতি “বিদ্” থেকে।

এই বিদ্যা শব্দের অর্থ হলো “জানা”। তাহলে বলা যায় জানার অর্থ, কোনো কিছু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অর্থে শিক্ষা শিক্ষালাভ করা।

আবার আমরা শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন ব্যবহার করি। এই এডুকেশন শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ থেকে।

আর এই এডুকেশন ল্যাটিন শব্দটি এসেছে  এডুকাতুম বা এডুকেয়ার থেকে। যার অর্থ হলো ভিতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা।

শিক্ষা কত প্রকার ও কি কি?

শিক্ষা কাকে বলে উপর থেকে আমরা জেনে গেছি। তাহলে এবার জানবো শিক্ষা কত প্রকার সেটার ব্যাপারে।

সাধারণত শিক্ষা দুই প্রকার। যথা –

সু শিক্ষা

কু-শিক্ষা

চলুন এই দুই প্রকার শিক্ষা সম্পর্কে নিচে থেকে জেনে আসি।

সুশিক্ষা কি?

সুশিক্ষা হলো এমন একটি শিক্ষা বা জ্ঞান যেটা অর্জন করার মাধ্যমে আপনি ভালো মানুষ হতে পারবেন। সুশিক্ষা মানুষের মধ্যে বিবেক বিবেচনা সৃষ্টি করে।

যখন একজন মানুষের মধ্যে বিবেক বিবেচনা থাকে তখন তার দ্বারা সহজে অন্যায় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই আমরা সব সময় চেষ্টা করবো সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য।

সুশিক্ষাকে আবার বলা হয় যৌক্তিক শিক্ষা। মানে যে শিক্ষা গ্রহণ করার যুক্তি রয়েছে।

কু-শিক্ষা কি?

কু-শিক্ষা বলতে খারাপ শিক্ষাকে বুঝায়। সমাজে কু-শিক্ষা গ্রহণ করা ব্যাক্তি সব সময় অন্যায় অপরাধ করে থাকে।

কু-শিক্ষা গ্রহণ করা ব্যাক্তির মাঝে বিবেক থাকে না। তাই তাদের দ্বারা যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের অন্যায় অপরাধ করা সম্ভব।

কু-শিক্ষাকে অনেক আবার বলে থাকেন অযৌক্তিক শিক্ষা। মানে যে শিক্ষা গ্রহণ করার কোনো যৌক্তিকতা আছে না।

শিক্ষার কাজ কি?

শিক্ষার আসল কাজ” হলো নিজেকে অন্যদের থেকে অনেক বেশি জানা। নিজের মধ্যে থাকা ভুল গুলো সমাধান করা।

সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরে নিজেকে দেশ ও জাতির সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। মনে রাখবেন সুশিক্ষিত নাগরিক দেশ ও জাতির জন্য মহামূল্যবান সম্পদ।

আবার অনেকে বলে শিক্ষার আসল কাজ হলো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব সৃষ্টি করা।

শিক্ষার প্রধান উপাদান গুলো কি কি?

আমরা জেনেছি কোনো বিষয় জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করাকে শিক্ষা বলে। শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলো হলো –

  • শিক্ষার্থী 
  • শিক্ষক 
  • পরিবেশ 
  • বিদ্যালয়
  • শিক্ষার এই ৪ টি উপাদন ছাড়াও বর্তমানে আরো একটি উপাদান শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেটা হলো – প্রযুক্তি

    শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?

    শিক্ষার বৈশিষ্ট্য আমরা দুই ভাবে উল্লেখ করতে পারি। এর মধ্যে একটা হলো সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্য এবং অপরটি হলো ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্য।

    আমি ব্যাপক অর্থে শিক্ষার কিছু উল্লেখ যোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো –

  • শিক্ষা শিশুদের সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান করে থাকে।
  • শিক্ষা কি? শিক্ষা কত প্রকার কি কি?শিক্ষাকে বলা হয় অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন ও পুনঃসৃজন।
  • শিক্ষা অর্জন করতে হয় বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বাস্তব সমস্যা সমাধানের মাধ্যম দিয়ে।
  • শিক্ষা আমাদের সমগ্র জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া এবং এর প্রধান শিক্ষা ব্যাক্তির জীবনের সাথে সমব্যাপী।
  • শিক্ষার কোনো অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় না, তার আগ্রহ চাহিদা অনুযায়ী তাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
  • শিক্ষা ব্যাক্তির অবাঞ্ছনীয় আচার-আচরণ গুলো পরিবর্তন করে নতুন আচার-আচরণ সম্পাদন করে।
  • শেষ কথা

    আজকের আলোচনা আমরা জানলাম শিক্ষা কি বা শিক্ষা কাকে বলে এবং কত প্রকার ও কি কি? শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করা।

    তাছাড়া আমরা সব সময় চেষ্টা করবো সুশিক্ষা বা যৌক্তিক শিক্ষা অর্জন করার জন্য। তাহলে শিক্ষা দেশ ও জাতির সম্পদ হবে।

    Scroll to Top