মোবাইল ব্যাংকিং কি | বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত

বর্তমানে আমরা সবাই মোবাইল ব্যাংকিং কি তা সম্পর্কে কমবেশি জানি। মোবাইল ব্যাংকিং বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর নানারকম সুবিধার জন্য। আজকে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং কি এবং বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
মোবাইল ব্যাংকিং কি - বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত

মোবাইল ব্যাংকিং কি

মোবাইল ব্যাংকিং কি তা জানার জন্য আমাদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে আমরা এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি। এ যুগে এসে আমরা আর ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাংকে গিয়ে টাকা লেনদেনের জন্য অপেক্ষা করি না। মোবাইল ব্যাংকিং কি এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতেই পারি মোবাইলের মাধ্যমে যে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হয় সেটি মোবাইল ব্যাংকিং।
বর্তমান যুগে আমাদের সবারই হাতে হাতে মোবাইল অথবা ট্যাব। ব্যাংকে গিয়ে আমরা সাধারণত অর্থ লেনদেন করি অথবা কোন বিল দেই। একাজে আমাদের অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এই বসে থাকা কমানোর জন্যই বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
এককথায় মোবাইল ব্যাংকিং কি তা বলতে গেলে বলা যায়,মোবাইলে কোন একাউন্ট খোলার মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে যে টাকা লেনদেন এবং বিভিন্ন বিল পেমেন্ট করার যে সুবিধা উপভোগ করি সেটিই মোবাইল ব্যাংকিং। তো বন্ধুরা এ থেকে আপনারা মোবাইল ব্যাংকিং কি তা সম্পর্কে একটা ধারণা পেতেই পারেন।

মোবাইল ব্যাংকিং বলতে কি বুঝায়

এই যুগে মোবাইল ব্যাংকিং বলতে কি বুঝায় তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং বলতে কি বুঝায় এই প্রশ্নের জবাব বেশ সহজ। মোবাইল ব্যাংকিং বলতে কি বুঝায় তা নিয়ে এক কথায় বলা যায়, একটি মোবাইল বা ট্যাবের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্ট এর ব্যালেন্স দেখা, বিভিন্ন বিল পেমেন্ট, ফান্ড ট্রান্সফার, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।
মোবাইল ব্যাংকিং বলতে কি বুঝায় এটি জানার সাথে সাথে আমাদের জানতে হবে কিভাবে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটি সহজেই ব্যবহার করতে পারি? এজন্য প্রথমেই আপনার একটি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে হবে। এরপর একাউন্ট নাম্বার এবং পাসওয়ার্ডের সাহায্যে আপনি মোবাইলেই যেকোনো সময় আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।

মোবাইল ব্যাংকিং এর কাজ কি?

একটা সময় ছিলো নিজের পরিবার কিংবা নিকটাত্মীয়ের কাছে দূর দূরান্তে টাকা পাঠানো সময় সাপেক্ষ এবং জটিল একটি প্রক্রিয়া ছিলো। বর্তমানে এই কাজটি সহয করে দিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। এছাড়াও,
  1. ঘড়ে বসেই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সহযেই বিদ্যুৎ বিল,গ্যাস বিল,পানির বিল পরিশোধ করা যায়। ফলাফল ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
  2. অগ্রিম ট্রেন, বাসের টিকিট কাটা যায় মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটার কাজটি সহয করে দিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং।
  3. জরুরি মূহুর্তে হতে পারে মধ্য রাতে মোবাইলে রিচার্জ প্রয়োজন। এই কাজটি সহযে করা যায় মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্যে।
  4. অনলাইনে পণ্য বা সেবা ক্র‍য়ের মূল্য পরিশোধ করা যায় মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
  5. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি,ফরম ফিল-আপ সহ যাবতীয় বিল পরিশোধ এখন হাতে থাকা মুঠোফোনের দ্বারা মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্য করা যায়।
  6. রেস্তোরাঁয় খাবার বিল থেকে শুরু করে কাপড়ের দোকান,বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের মূল্য স্পর্শ বিহীন উপায়ে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সহযেই করা যায়।
  7. বর্তমান সময়ে ইদের সেলামি লেনদেনের কাজটিও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা যাচ্ছে।
জীবন মান উন্নয়নে আমাদের আর্থিক লেনদের কাজগুলো সহয করার উদ্দেশ্যেই দিন দিন মোবাইল ব্যাংকিং এর কার্যক্রমের পরিধি বেড়েই চলেছে।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা কি

আমরা প্রতিটা ব্যক্তিই রোজ কোন না কোন ভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিয়ে থাকি। উদাহরণ স্বরুপ সামনে ইদ কে সামনে রেখে একদল লোক বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে আগাম ইদের টিকিট অনলাইনে কেটে রেখেছে এবং টিকিট মূল্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পরিশোধ করেছে।
অর্থাৎ যে ব্যাংকিং সেবা আমাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনায়েসেই আমরা পেতে পারি তাকেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বলা যেতে পারে। অবশ্যই সেটা হতে হবে যেকোন আর্থিক লেনদেন।

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কি

বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দ্বারা পরিচালিত অন্যতম একটি মোবাইল ব্যাংকিং এর নাম ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিং। ২০১৯ সালে এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয় এবং বাংলাদেশে অনেক পরিচিতি লাভ করে খুব অল্প সময়ে। এখন পর্যন্ত ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিং এর ইউজার সংখ্যা ৪ কোটির ও অধিক। যেকোন আর্থিক লেনদেন এ বিশ্বস্ততার সাথে ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের সেবা দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাধ্যম যেকোন আর্থিক লেনদেনের জন্য। একসময় বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং শুধুমাত্র চালু হয় টাকা আনা নেওয়া অর্থাৎ স্থানান্তরের জন্য। কিন্তু বর্তমানে টাকা পাঠানো আনা নেওয়া ব্যাতিত যেকোন বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে স্কুলের ফি,
অনুদান অব্ধিও এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর ইতিহাস কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়। অথচ বাংলাদেশের মানুষের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গুলোর ব্যাবহার অগণিত।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং কয়টি

বাংলাদেশে মোট মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ২০ এর ও অধিক চালু রয়েছে বর্তমান। অন্মধ্যে, বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে আমরা পূর্ব পরিচিত। বিকাশ,রকেট,নগদ তো আমরা সচারচর ব্যাবহার করেই থাকি। এছাড়াও আরো অনেক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে যেগুলো অনুমদিত কিছু ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয় কবে

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনকে সহয ও সময় সাশ্রয় কম করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। আজ থেকে একদশক আগের কথা ২০১০ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ডাচ ব্যাংক লিমিটেডের হাত ধরে। তাদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটির নাম,রকেট।
প্রথম দিকে এই সেবাটি পেতে হাতের মুঠোফোনে সংখ্যা ডায়াল করে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহযেই টাকা পাঠানো যেতো। বর্তমান সময়ের পরিবর্তন ও হাতে থাকা মোবাইল ফোনের উন্নয়ন এবং মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন ব্যাবহার করে এক ট্যাপেই আর্থিক লেনদেনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সমূহ

শুরুতেই আলোচনা করেছি বাংলাদেশে প্রায় ২০ এর অধিক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে। চলুন সেসব মোবাইল ব্যাংকিং গুলো আমরা জেনে নেই।
  • বিকাশ
  • রকেট
  • নগদ
  • উপায়
  • শিওর ক্যাশ
  • এজেন্ট ব্যাংকিং
  • টি ক্যাশ
  • রেডি ক্যাশ
  • ইউ ক্যাশ
  • মাই ক্যাশ
  • টেলি ক্যাশ
  • এম ক্যাশ
  • পি মানি
  • ইসলামিক ওয়ালেট
  • ওকে অয়ালেট
  • পল্লি লেনদেন
  • ট্যাপ এন পে
  • আই ব্যাংকিং
  • আমার একাউন্ট
  • সিটি টাচ
  • জাস্ট পে
  • স্কাই ব্যাংকিং
  • ডিবিএল গো

উপায় মোবাইল ব্যাংকিং

বিকাশ,নগদ ও রকেটের ন্যায় উপায় মোবাইল ব্যাংকিং ও অত্যন্ত জিনপ্রিয় একটি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা। উপায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটি বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় UCB ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত হয়। এর পূর্বে UCB ব্যাংকের Ucash নামে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা চালু ছিলো। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ইউ ক্যাশ ও উপায়ের সমন্বয়ে নতুনভাবে ‘উপায়’ মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা নামে যাত্রা শুরু করে এবং এখনো আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে।

উপায় মোবাইল ব্যাংকিং কোড

উপায় মোবাইল ব্যাংকিং কোড টি হচ্ছে : *268#
এছাড়াও মোবাইলের মাধ্যমে যেকোনো সহযোগিতা পেতে তাদের উপায় মোবাইল ব্যাংকিং হেল্পলাইন নাম্বারটি হলো : 16268

উপায় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ

উপায় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে সহযেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন। নতুন গ্রাহক হিসেবে অ্যাপ লগ ইন এ আপনার জন্য থাকছে ৫০ টাকা বোনাস। এছাড়াও উপায় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপে অন্যান্য আরো অনেক সুবিধা পেতে পারেন।

ট্রাস্ট ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং

ট্রাস্ট ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবাটির নাম ‘টি ক্যাশ’। টি ক্যাশ ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে চালু হয়। অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর ন্যায় টি ক্যাশ ব্যাবহার করে গ্রাহক খুব সহযেই হাতে থাকা মুঠোফোনের সাহায্যে এসএমএস,ইউওএসডি বা ইন্টারনেট সংযোগের সাহায্যে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাবহার করে বর্তমানে লেনদেনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় আর্থিক লেনদেন ছিলো হাতে হাতে টাকা পাঠানো বিভিন্ন মাধ্যম ব্যাবহার করে। মাধ্যম গুলো ছিলো পরিচিত কারো হাত দিয়ে অথবা নিজে গিয়ে টাকা দিয়ে আসা। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে লেনদেন করতে হতো।
এখন মোবাইল ব্যাংকিং চলে আসার ফলে এই লেনদেনগুলো হয়ে গেছে অনেকটা ঝুঁকিহীন। দেশের অভ্যন্তর থেকে শুরু করে দেশের বাইরেও এখন টাকা পাঠানোর কাজটি সহযেই মোবাইল ব্যাংকিং এর লেনদেনের মাধ্যমে করা যায়।

মোবাইল ব্যাংকিং আন্ত লেনদেন

মোবাইল ব্যাংকিং এর আন্ত লেনদেন বলতে আমরা বুঝি দেশের অভ্যন্তরে যেকোন আর্থিক লেনদেন। সেটা হতে পারে যেকোন বিল পরিশোধ কিংবা টাকা পাঠানো।
পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের লেনদেনের কাজ সহজ করে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু, যেকোন মূহুর্তে আমরা আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং এর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতেও পারি। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নেওয়ার পর সেব্যাপারে আমাদের জেনে রাখা ভালো আবশ্যক বলে আমি মনে করি।
Scroll to Top