বাংলাদেশ রেলওয়ে ই-টিকিট সহজ.কম ট্রেনের টিকিট কাটার নতুন নিয়ম

Bangladesh Railway E-Ticket – এর মাধ্যমে আমরা সহজেই ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারি। আজকের আর্টিকেলটিতে ট্রেনের টিকেট কাটার  A to Z বর্ণনা করা হল। বর্তমানে আপনি ট্রেনের টিকিট দুই ভাবে কাটতে পারবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ই-টিকিট, সহজ.কম ট্রেনের টিকিট কাটার নতুন নিয়ম
যথাঃ
অফলাইন এবং অনলাইন

তবে আমরা এখানে সহজে কিভাবে কাটতে পারবেন সেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবো। সেই জন্য আমরা ২য়টা বেছে নিবো। কারণ অফলাইনে আপনাকে অবশ্যই রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটতে হবে। যেটা খুব বেশি সহজ বিষয় না।

তাই আপনি ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে সহজেই ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই।

এখানে আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য মোট ৮টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। আমি ধাপগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে লেখার চেষ্টা করবো।

প্রথম ধাপঃ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশান করাঃ

ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য আপনাকে প্রথমে রেজিস্ট্রেশান করতে হবে। এজন্য আপনাকে https://eticket.railway.gov.bd/register/en এই লিংকটিতে প্রবেশ করতে হবে। তারপর আপনি নিচের এখানে আপনার নিজের তথ্যগুলো দিয়ে ফরম পূরণ করবেন। যা যা লাগবে এখানেঃ
  • আপনার পুরোপুরি নাম।
  • আপনার ব্যাক্তিগত ই-মেইল।
  • আপনার মোবাইল নাম্বার।
  • পাসওয়ার্ড দিবেন।
  • NID অথবা জন্মনিবন্ধন এবং নাম্বার সহ পাশে দিতে হবে।
  • পোস্ট কোর্ড দিতে হবে।
  • NID কার্ড অনুসারে আপনার ঠিকানা।

২য় ধাপঃ- Mobile ভেরিফাই করুন

উপরের ফরমটি পুরণ করার পর একাউন্টটি ভেরিফাই করার জন্য আপনার মোবাইল নাম্বারে ৬ ডিজিটের একটি OTP কোড আসবে এবং কোডটির মাধ্যমে একাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে। আর অবশ্যই ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে কোডটি সঠিক ভাবে ভেরিফাই করতে হবে। ফেরিফাই করার পর আপনার একাউন্ট লগ ইন হয়ে যাবে।

৩য় ধাপঃ- Account লগ ইন করুন

একাউন্ট ফেরিভাই হওয়ার পর লগ ইন হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে যদি আবার এই ওয়েব সাইটে আসার প্রয়োজন হয় তাহলে নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে পারবেন।

সেজন্য আপনাকে আপনার মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড সেভ রাখতে হবে।


তবে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ফরগেট পাসওয়ার্ড করে আপনি আবার পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে নিতে পারবেন সহজেই। তাছাড়া আপনার মূলবান তথ্যগুলো বা টিকিট সংক্রান্ত তথ্য আপনাকে ই-মেইল এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

৪র্থ ধাপঃ- ট্রেন সার্চ করুন

একাউন্ট লগইন হয়ে গেলে আপনাকে সাইটের হোম পেইজে নিয়ে আসবে। সেখন থেকে আপনি কোন ট্রেনে ভ্রমন করবেন সেই ট্রেনের নাম লিখে সার্চ করতে হবে। অথবা কোন স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবেন এবং কোথায় গিয়ে যাত্রা শেষ করবেন এটাও এড করতে হবে। আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য আরো সহজ ভাবে বলার চেষ্টা করছি।

From – আপনি যে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবেন।


To- আপনি যে স্টেশনে নামবেন বা যেখানে যাত্রা শেষ করবেন।

Date of Journey – এখানে আপনি যে সময়ে ট্রেনে ভ্রমন শুরু করবেন বা যেই দিন ট্রেনে যাত্রা শুরু করবেন সেই দিনটির তারিখ বাছায় করবেন।


Choose Class – উপরের অপশন গুলো সঠিক মতো পুরণ হওয়ার পর শেষ অপশনটি হলো Choose Class এখানে Find বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং এরপর আপনার বাছায় করা সকল ট্রেনের লিস্ট চলে আসবে। তারপর আপনি সেখান থেকে ট্রেনের নাম এবং সময় অনুযায়ী টিকেট কাটার জন্য সিলেক্ট করুন।

৫ম ধাপঃ- ট্রেন এবং সিট বাছাই করুন

ট্রেনে ভ্রমনের সময় এবং সিটের ধরন অনুযায়ী ট্রেনের সিট বাছাই করুন। যদি সিট খালি থাকে তাহলে Seats Available অপশন আপনার সামনে থাকবে। আপনার সিট বাছাই করার জন্য সেখানে ক্লিক করবেন এবং সেখান থেকে সিট বুকিং করবেন।

৬ষ্ট ধাপঃ – যাত্রীর তথ্য

এই ধাপে আপনি যতগুলো সিট বুকিং করবেন সেই সিটগুলোর যাত্রীদের তথ্য দিতে হবে। যদি ৫ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু থাকে তাহলে Passenger Type Child সিলেক্ট করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে ভাড়া কম বেশি হতে পারে। 
 এখানে আপনি ইন্টারফেস দেখলেই সকল বিষয়গুলো সহজেই বুঝতে পারবেন।

তাছাড়া সেখানে সবকিছুই সুন্দর করে বোঝানোই আছে। কত টাকা খরচ হবে এবং কতটা কাটবেন টিকিট আপনি সেই সব বিষয় আপনি দেখলেই বুঝতে পারবেন।

৭ম ধাপঃ- টিকেটের টাকা পরিশোধ

এই ধাপে আপনি যে কতটি টিকেট ক্রয় করেছেন সেগুলো ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। টিকেটের ভাড়া এবং সার্ভিসের জন্য কিছু টাকা সহ মোট যত আসবে সেটা দুটি মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

প্রথমত মোবাইল ব্যাংকিং অর্থাৎ বিকাশ, নগদ, রকেট, ইত্যাদির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদি ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ডের অপশন না থাকে তাহলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

৮ম ধাপঃ- ট্রেনের টিকিট ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা

এটাকে আমি শেষ ধাপ হিসেবেই ধরেছি এই আর্টিকেলটিতে। আপনার উপরের সকল ধাপ শেষ হলেই কেবল মাত্র আপনি এই ধাপ এ আসতে পারবেন। 

এবং সর্বশেষ ধাপে আপনি আপনার কেটে নেওয়া টিকিটটা ডাউনলোড করবেন এবং প্রিন্ট করে ট্রেনে ভ্রমন করতে পারবেন। টিকিট চেক করতে আসলে আপনি সেটা দেখালেই চলবে।


তবে আপনার দেওয়া ই-মেইলেও আপনি টিকিটটা পাবেন। আবার আপনি লগইন করেও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। অনেকেই আছেন টিকিট টা প্রিন্ট না করেই ট্রেনে ভ্রমন করে থাকেন। তবে এটা উচিত নয়। তবে হ্যা সময় না থাকলে বা প্রিন্ট সমস্যা হলে টিকিট চেক করতে আসলে সেই বিষয়টা আপনি বুঝিয়ে বললেই হয়ে যাবে।

এজন্য আপনাকে বাড়তি কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম 

অনেকেই টিকিট কেটে নেওয়ার পর ভ্রমন করতে চান না। তারা চাইলে টিকিট ফেরত দিতে পারবেন। এই জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে ফেরত দিতে হবে। এবং কিছু চার্জ কেটে নেওয়া হবে এই জন্য।


যেমন, 

(ক) যাত্রা শুরু করার ৪৮ ঘন্টা আগে যদি আপনি টিকিট ফেরত দেন তাহলে এসি ক্লাসের জন্য ৪০ টাকা, প্রথম শ্রেণির জন্য ৩০ টাকা এবং অন্য শ্রেণির জন্য ২৫ টাকা পরিষেবা চার্জ হিসেবে কেটে রাখবে কর্তৃপক্ষ।

(খ) যদি আপনি ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফেরত দেন। মানে ২৪ ঘন্টার বেশি এবং ৪৮ ঘন্টার কম।


তাহলে ভাড়ার ২৫% কেটে নিবে পরিষেবা খরচ হিসেবে।

(গ) যদি ১২ ঘন্টা থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হয় তাহলে ৫০% এবং ৬ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা হলে ৭৫% কেটে নেওয়া হবে।

(ঘ) তবে ৬ ঘন্টার কম হলে সেই টিকিট ফেরত নেওয়া হয় না। সেজন্য আপনাকে অবশ্য টিকিট কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে থেকে সেই সময় যারা টিকিট কাটবে তাদেরকে দিতে হবে।


কি ধরনের পেমেন্ট সিস্টে ব্যবহার করতে পারবেন আপনি ই-টিকিট এর জন্য? 

অনেকেই মনে করেন হয়তো অনলাইনে পেমেন্ট করা অনেক ঝামেলা। তবে বর্তমানে আপনি বিকাশ, নগদ, রকেট, নেক্সাস, ভিসা ও মাস্টার কার্ড এর মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইন টিকিট কেটে নিতে পারবেন।

তবে টিকিট কাটার সময় আপনি বিস্তারিত তথ্যগুলো লগইন করার পর চেক করে নিতে পারবেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিকাশের মাধ্যমে একাধিকবার পেমেন্ট করেছি এবং অনলাইনেই টিকিট কেটেছি। যারা অনলাইনে কাটতে পারে তারা অফলাইনে যেতে চাইবে না।

কারণ যাতায়াত ভাড়া ও সময় চিন্তা করলে অনলাইনে কাটা অনেক সহজ এবং নিরাপদ। এবং টিকিট হারানোরও ভয় থাকে না। শেষ কথা 

প্রযুক্তির যুগে আপনি প্রযুক্তির ব্যবহার জানলে অনেক সহজভাবেই আপনি কিছু কাজ করতে পারবেন। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ রেলওয়ে নয় পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের টিকিট ই আপনি ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে কেটে নিতে পারবেন।


আশা করবো আপনারা কিভাবে অনলাইন ব্যবহার করে সহজেই বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন ই-টিকিট কাটতে পাবেন বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। অনেক ধন্যবাদ মূলবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। এই ই-টিকিট বা ট্রেনের টিকিট সংক্রান্ত কোন ধরনের প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট এ জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই আপনাকে যথাযথ তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করবো।

Scroll to Top