বন্ধুরা আজকে আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো, কন্টেন্ট রাইটিং কি (What is content writing in bangla), কন্টেন্ট রাইটিং কাকে বলে, কত প্রকার এবং কিভাবে শুরু করবেন সেই সমস্ত বিষয়ে। তাছাড়া আরো বলবো একজন সেরা কন্টেন্ট রাইটার হতে কিসের প্রয়োজন হয়।
বর্তমান ইন্টারনেটের এই যুগে বিভিন্ন কোম্পনি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের প্রডাক্ট বা সার্ভিস গুলো অনলাইনে প্রচার করার জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং এর ব্যবহার করে থাকে। আর এই প্রক্রিয়াতে বিজনেস, প্রডাক্ট, সার্ভিস বা ব্রান্ড এর উপর আর্টিকেল লেখা হয়।
এই আর্টিকেল গুলোকে ইন্টারনেটে পাবলিশ করা হয় সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট বা ব্লগ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এছাড়া আমি যদি মনে করেন ঘরে বসে অনলাইন ইনকাম করার ক্ষেএেও নিজে পার্সোনাল ভাবে নিজের একটি ব্লগ সাইট তৈরি করে সেখানে নিজের লেখা আর্টিকেল / কন্টেন্ট লিখে পাবলিশ করতে পারবেন।
এভাবে ছোট বড় কোম্পনি, ফার্ম বা ব্লগিং এর মাধ্যমে ব্যাক্তিগত ভাবে অনলাইন ইনকাম করার জন্য content writing এর চাহিদা বর্তমানে প্রচুর পরিমানে।
বর্তমানে আমরা সবাই ডিজিটাল হয়ে যাওয়ার কারণে একজন কন্টেন্ট রাইটার এর চাহিদা অনেক এবং আপনি যদি একজন ভালো মানের কন্টেন্ট রাইটার হয়ে থাকেন তাহালে আপনার জন্য প্রচুর পরিমানে online বা in house চাকরির সুযোগ রয়েছে।
মনে করুন, আপনার বিভিন্ন ব্লগ সাইট রয়েছে অনলাইনে। এবার আমার ব্লগে কন্টেন্ট লেখার উদ্দেশ্য বিভিন্ন কন্টেন্ট রাইটাররা নিজের ঘরে বসে আর্টিকেল লিখছে আমার ব্লগ সাইটে পাবলিশ করার জন্য।
এতে, করে আমার ব্লগের জন্য কন্টেন্ট লেখা কন্টেন্ট রাইটাররা ঘরে বসে টাকা আয় করার সুযোগ পাচ্ছে। এবার আপনারা ভাবুন কতটা সুবিধা এবং লাভজনক কাজ এটা।
তবে, আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা কন্টেন্ট রাইটিং এর বিষয়ে ভালো করে জানে না। এজন্য আমি নিজে সম্পর্ন সুন্দর করে বুঝিয়ে দিবো কন্টেন্ট রাইটিং কি। তাছাড়া আমি আরো কিছু কন্টেন্ট রাইটিং টিপস অবশ্যই দিবো, যাতে আপনারা সহজে শিখতে পারেন।
কন্টেন্ট কি? (What is content writing in bangla)
Content writing কি এই বিষয়ে ভালো করে জানার জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে কন্টেন্ট মানে কি সেই সম্পর্কে। এখানে বাংলাতে যদি কন্টেন্ট এর মানে হলো বিষয়বস্তু।
লেখনের উদ্দেশ্য করে কন্টেন্ট এর কথা বলা হয় তাহালে কন্টেন্ট বলতে, আপনি যেটা লিখছেন নিজের কৌশলের মাধ্যমে সেই বিষয় বস্তু তৈরি করেছেন সেটাই একসাথে কন্টেন্ট বলা যেতে পারে।
সহজ ভাবে বললে, যখন আপনি সম্পর্ন নিজের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে একটি আর্টিকেল লিখবেন তখন সেটাকে কন্টেন্ট বলা যায়। মনে করুন, আপনি একটি মোবাইলে ভিডিও রেকার্ড করে সেখানে কিছু তথ্য যুক্ত করে সুন্দর করে এডিট করলেন।
তখন এই সম্পর্ন ভিডিওকে একটি ভিডিও কন্টেন্ট বলতে পারবেন। মনে রাখবেন কন্টেন্ট মানে শুধু লেখা (writing) এর মাধ্যমে তৈরি করা বিষয়বস্তু কে বলা হয় না। সাধরণত কন্টেন্ট বলতে আমরা ৪ ধরনের বিষয়ে বুঝে থাকি।
Audio content: শব্দ বা ভয়েসের মাধ্যমে মাধ্যমে রেকার্ড করা কন্টেন্ট। যেমন, FM, podcast ইত্যাদি।
Text content: যে কন্টেন্ট গুলো লেখার মাধ্যমে তৈরি করা হয় সেগুলোকে টেক্সট কন্টেন্ট বলে। যেমন, আর্টিকেল এবং বই ইত্যাদি।
Image content: বিভিন্ন ধরনের ছবি এডিটিং করে তৈরি করা বিষয়বস্তু গুলোকে ইমেজ কন্টেন্ট বলা হয়। যেমন- Graphic, logo, template ইত্যাদি।
Video content: বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এক সাথে যুক্ত করে যে কন্টেন্ট গুলো তৈরি করা হয় সেগুলোকে বলা হয় ভিডিও কন্টেন্ট। যেমন – YouTube video, movies, web series ইত্যাদি।
আশাকরি কন্টেন্ট কি সেটা সহজে বুঝতে পারছেন। তাহালে চলুন এবার নিচে থেকে জেনে আসি “কন্টেন্ট রাইটিং কি” সেই সম্পর্কে।
কন্টেন্ট রাইটিং কি? (What is content writing in bangla)
কন্টেন্ট রাইটিং মানে হলো যেকোনো একটি বিষয়কে লেখনের মাধ্যমে সম্পর্ন নিজের মতো করে তৈরি করা। সহজ ভাবে বললে, কন্টেন্ট রাইটিং মানে হলো এমন একটি লেখন যেখানে একাধিক বিষয়ের উপর তথ্য প্রদান করা হয়।
এই লেখন গুলো বিভিন্ন বিষয়ের উপর হতে পারে। যেমন- ব্লগ আর্টিকেল, ষ্টোরি, পার্সোনাল রিভিউ, প্রডাক্ট প্রমোশন রিভিউ ইত্যাদি। content writing মূলত একটি বিষয়ের উপর কীওয়ার্ড (keyword) রিচার্স করে লেখা হয়।
আর এই কীওয়ার্ড এর মাধ্যমে সেই কন্টেন্টকে বিভিন্ন জায়গায় সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। আপনি যদি একজন সেরা কন্টেন্ট রাইটার হতে পারেন তাহালে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে content writing job করতে পারবেন।
তাছাড়া আপনি কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ গুলো নিজের ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে করতে পারবেন। তাহালে আশাকরি, কন্টেন্ট রাইটিং কি সেটা বুঝিয়ে বলতে পারছি।
কন্টেন্ট রাইটার কাকে বলে?
কোন ব্যাক্তি যখন নিজের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কৌশল এবং দক্ষতা ব্যবহার করে একটি কন্টেন্ট তৈরি করেন বা লিখেন তখন সেই ব্যাক্তিকে বলা হয় কন্টেন্ট রাইটার।
উদাহরণঃ আমি আমার ব্লগ সাইট “ajkeridea.com“ এর জন্য বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল লিখে থাকি। সেহেতু আমি আর্টিকেল লেখার মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি করছি, এজন্য আমাকে একজন কন্টেন্ট রাইটার বলা যেতে পারে।
ডিজিটাল কনটেন্ট কি? (What is digital content)
যখন কোনো কনটেন্টকে ডিজিটাল উপাত্ত আকারে বিরাজ করে প্রকাশ করা হয় বা প্রদর্শিত হয় তখন সেই কনটেন্টকে বলা হয় ডিজিটাল কনটেন্ট।
ডিজিটাল কনটেন্ট ডিজিটাল পদ্ধতিতে বা কম্পিউটার ফাইল আকারে সম্প্রচার হতে পারে। মনে রাখবেন, ডিজিটাল কনটেন্ট উপস্থাপন করা অনেক সহজ।
ডিজিটাল কনটেন্টের উদাহরণ হলো – ইমেজ কনটেন্ট অডিও কনটেন্ট, লিখিত কনটেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট ইত্যাদি।
কন্টেন্ট রাইটিং কত প্রকার? (Types of content writing)
অবশ্যই কন্টেন্ট রাইটিং এর জন্য আলদা কিছু প্রকার ভেদ রয়েছে। ইন্টারনেটে এমন প্রচুর প্লাটফর্ম রয়েছে যেখানে আলদা আলদা রকমের কন্টেন্ট পাবলিশ করা হয়।
যার ফলে বিভিন্ন প্লাটফর্মের চাহিদা অনুসারে তৈরি করা হয় আলদা আলদা রকমের কন্টেন্ট গুলো। একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসাবে আপনি নিচের রুচি মতো আলদা আলদা ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন।
যেমন,
Blogging: এখানে সরাসরি কিছু বিষয়ের উপার বিস্তরিত ভাবে আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করতে হয়। মূলত শর্ট বা লং তথ্য বহুল দুই ধরনের আর্টিকেল বা কন্টেন্ট লেখা হয় ব্লগিং এর জন্য।
Copy writing: এখানে মূলত একটি কোম্পনির মার্কেটিং বা প্রচার করার জন্য এই ধরনের কন্টেন্ট লিখতে হয়। এই আর্টিকেল লেখার মুল উদ্দেশ্য হলো ব্র্যান্ড এর গুণমান সম্পর্কে মানুষের মাঝে প্রচার করে কেনার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা।
Social media: একটি কোম্পানি তাদের প্রডাক্ট বা সার্ভিস ইত্যাদি প্রচার বা মার্কেটিং করার জন্য অনলাইনে ব্র্যান্ড তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়াতে পেজ বা গুরুপ তৈরি করে ছোট ছোট মজার আকর্ষণীয় কন্টেন্ট লিখেন বা পাবলিশ করেন।
Creative writing: যে লেখার মাধ্যমে একজন রাইটার নিজের ক্রিয়েটিভি প্রদর্শন করে থাকে সেই রাইটিংকে ক্রিয়েটিভ রাইটিং বলা হয়।
Expert writing: একজন বিশেষজ্ঞ রাইটার রা যখন যেকোনো বিষয়ে রিচার্স করে সম্পর্ন ডিটেলস সহ লেখেন তখন তাকে এক্সপার্ট রাইটিং বলা হয়।
News writing: এখানে নিউজ এর সাথে জড়িত সকল খবর গুলো লেখা হয়। এখানে ছোট ছোট শর্ট আর্টিকেল হিসাবে দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলি নিয়ে লেখা হয়। বিভিন্ন ধরের অনলাইন নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়া নিউজ পেজ, নিউজ ওয়েবসাইট গুলোতে নিউজ রাইটিং করা হয়।
বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবসা গুলোর প্রচার, ব্র্যান্ডিং, বা মার্কেটিং করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং প্রচুুর পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া আপনি নিজের পছন্দমত বিষয়ে কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারবেন।
কন্টেন্ট রাইটার কিভাবে হব?
মনে রাখবেন, কন্টেন্ট রাইটার হবার জন্য কোনো কোর্স এর প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি পড়ালেখা করা একজন ব্যাক্তি হয়ে থাকেন এবং ভালো লিখতে ও পড়তে পারেন তাহালে আপনি ও একজন কন্টেন্ট রাইটার হতে পারবেন।
তবে, এর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার লেখার মধ্যে রুচি থাকতে হবে। আপনি যদি নতুন করে কন্টেন্ট রাইটিং শিখতে চান এবং অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে চান তাহালে নিচে দেওয়া বিষয় গুলোর উপর নজর দিন।
১. প্রথমে নিজের পছন্দমত টফিক (niche) বাছায় করতে হবে। মানে আপনি যে বিষয়ে ভালো জ্ঞান রয়েছে সেই বিষয়টা খুজে বের করুন।
২. আপনি যখন নিজের পছন্দমত বা রুচি মতো টফিক খুঁজে পাবেন তখন ধীরে ধীরে একজন সফল কন্টেন্ট রাইটার এর দিকে এগিয়ে যাবেন।
৩. আপনাকে সব সময় ক্রিয়েটিভ হতে হবে এবং নতুন নতুন কৌশল শিখতে হবে। আপনি ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে রাইটিং এর উপর স্কিল (skills) বাড়াতে পারবেন।
৪. প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখতে থাকুন এবং নিজের ভুল গুলো শুধরাতে থাকুন। এতে ধীরে ধীরে আপনার রাইটিং এ উন্নত হবে।
৫. ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্লগে গিয়ে দেখুন তাহালে কিভাবে আর্টিকেল গুলো লিখেছে।
৬. নিজের লেখার ধারাবাহিতা বজায় রাখতে নিজে একটি ফ্রি ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করুন এবং সেখানে প্রতিদিন নিজের পছন্দের বিষয়ে লিখতে থাকুন।
৭. লেখার সময় অবশ্যই পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে। যদি না থাকে পড়ার অভ্যাস তাহালে অভ্যাস করে নিন। এতে আপনি অন্যদের লেখা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
৮. আর্টিকেল লেখার সময় শব্দের মধ্যে সঠিক ব্যবহার করতে হবে। যদি না করেন তাহালে আপনার লেখা ভিজিটরদের পড়তে অসুবিধা হবে। এজন্য যে ভাষাতে লিখতে চাচ্ছেন সেই ভাষা সম্পর্কে ভালো করে শিখুন এবং জানুন।
৯. আপনার লেখার মধ্যে অবশ্যই একটা মজার বিষয় থাকতে হবে। না হলে মানুষরা আর্টিকেল পড়তে পছন্দ করবে না। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন আকর্ষণীয় এবং মজার ধরন দিয়ে আর্টিকেল লিখতে হবে।
১০. যে বিষয়ে আর্টিকেল লিখবেন সেই সম্পর্কে অবশ্যই রিচার্স করে সমস্ত তথ্যবহুল কন্টেন্ট লেখার চেষ্টা করবেন।
আপনারা যদি উপরের ধারণা গুলোর ওপর নজর দিয়ে কাজ করতে পারেন তাহালে সহজে একজন কন্টেন্ট রাইটার হতে পারবেন।
কনটেন্ট রাইটিং আয় করার ওয়েবসাইট
কনটেন্ট রাইটিং করে আয় করার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে ইন্টারনেটে। এই ওয়েবসাইট গুলোতে আপনারা কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ করে আয় করতে পারবেন।
তবে, এর জন্য আপনাকে কনটেন্ট রাইটিং এর উপর ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার লেখার স্কিল যদি ভালো হয় তাহলে প্রতি কনটেন্ট এর জন্য ১৫-২০ ডলার আয় করতে পারবেন।
কনটেন্ট রাইটিং আয় করার জনপ্রিয় অনলাইন ওয়েবসাইট গুলো হলো –
- Upwork
- Freelancer
- Fiverr
আর আপনি যদি বাংলা কনটেন্ট রাইটার হয়ে থাকেন তাহলে বাংলাদেশী জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোতে কনটেন্ট লিখে আয় করতে পারবেন।
জনপ্রিয় বাংলা কনটেন্ট রাইটিং ওয়েবসাইট গুলো হলো –
- জে-আইটি
- প্রথম আলো
- টেন মিনিট স্কুল
- সফল ফ্রিল্যান্সার
- টেক টিউন
আজকে আমরা কি শিখলাম
তাহালে বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা শিখলাম কন্টেন্ট রাইটিং কাকে বলে (what is content writing). আমার এই আর্টিকেল যদি আপনারদের কাছে ভালো লাগে তাহালে নিচের সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
তাছাড়া, এই আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো বিষয়ে প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচের কমেন্টে জানিয়ে দিবেন। আমি সব সময় চেষ্টা করি আপনাদের সাথে সঠিক তথ্য শেয়ার করা জন্য। তাই আশাকরি content writing এই বিষয়ে আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লাগছে।